অফবিট

পৃথিবীর কোন দেশের নদীতে ৭ টি রং দেখতে পাওয়া যায় জানেন?

আমাদের পৃথিবী রূপে গুণে সত্যিই অতুলনীয়া । সাজানো-গোছানো পৃথিবীর এই প্রকৃতির রূপ যে আমাদের কেবল তার সৌন্দর্য দিয়ে মুগ্ধ করে তাই নয় বরং আমাদের মনে নানা কৌতুহলের সৃষ্টিও করে ।পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রকৃতির এমন কিছু অনবদ্য অবদান যা সত্যিই আমাদের আশ্চর্য করে ।পৃথিবীর এই স্থান গুলো চাক্ষুষ  করলে মনে হয় স্বয়ং স্বপ্নরাজ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে জায়গাগুলি  ,এমন ই অবিশ্বাস্য এদের সৌন্দর্য। আজ এরকমই একটি জায়গার কথা শোনাবো আপনাদের। এটি হল  কলম্বিয়ার “রামধনু নদী” ।নামটা থেকেই আশা করি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছেন ।কলম্বিয়ার  কানো ক্রিস্টেলস নামক এই নদীতে রামধনুর সাতটি রঙের খেলা দেখতে পাওয়া যায় ।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা আর সৌন্দর্যের দিক থেকেও  এগুলি অতুলনীয় তবে বাকি নদীর থেকে এই রামধনু নদী কিন্তু একদমই আলাদা।এখানে যেন সারা বছর ধরে এক রঙের মেলা বসে। প্রায় পাঁচটি ছটি মনমুগ্ধকর রং দেখতে পাওয়া যায় এই নদীতে। উপর থেকে এই নদীর দিকে তাকালে মনে হয় কেউ যেন রামধনুর রঙে সাজিয়ে তুলেছে নদীটিকে ।এই নদীর সৌন্দর্য মোহিত হয়ে অনেকেই এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নদী বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন ।

এই নদীর সৌন্দর্য নিয়ে মনে কারো মনে কোন দ্বিমত না থাকলেও রামধনুর নদীর সৃষ্টি নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ।একই সাথে একটা নদীতে এত গুলির রং কি করে সৃষ্টি হতে পারে তা মানুষকে বরাবর কৌতুহলী করে তুলেছে ।তবে বর্তমানে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে পাওয়া গেছে ।

কানো ক্রিসটেলস নামক এই নদীর  উৎপত্তি  সেরিনিয়া ডেলা মাকারিনা নামক পাহাড় থেকে। বছরের বেশিরভাগ সময় এই নদীর রং স্বাভাবিক পাহাড়ি নদীর মত থাকলেও বর্ষাকালে এই নদীর রং পাল্টে যায় ।

লাল রঙ

এই নদীর লাল রঙ আসলে এই নদীর তলদেশে জন্মানো লাল রংয়ের গুল্মলতা থেকে ।বর্ষাকালে এই নদীর তলদেশে পাথরের গায়ে জন্মায় এই বিশেষ ধরনের গুল্ম । আর নদীর যে অংশে রোদ বেশি থাকে সেই অংশে এই লাল রঙের লতা বেশি জন্মায় ।আর স্রোতের সাথে এগুলি দুলতে থাকে ফলে ওই অংশের নদীর রং লাল দেখায় ।

সবুজ রঙ

নদীর যে অংশে স্রোত কম থাকে সেই অংশে অন্যান্য নদীর মতই এই  ক্রিস্টেলস নদীর পাদদেশে ও জন্মায় সেবাসহ নানা সবুজ গুল্ম । ফলে যে স্থানে স্রোত কম থাকে, সেখানে সবুজ রঙ দেখা যায়।

নীল রঙ

নদীর যে অংশে কোন গুল্মলতা জন্মায় না সেই অংশটা সাধারণত কোন রকম রং বিহীন থাকে ।আর এই রং বিহীন জায়গাতেই আকাশের ছায়া পড়ার ফলে নদীর রং দেখায় নীলচে

হলুদ রঙ

নদীর কিছু কিছু অংশে বালির পরিমাণ অন্যান্য অংশের থেকে অনেকটাই বেশি থাকে আর এই বালির রং হয় অপেক্ষাকৃত হলুদ ।ফলে স্বচ্ছ জলের উপর থেকে নিচের দিকে তাকালে নদীর রং মনে হয় হলুদ

কালচে  ও ধুসর রঙ

এতগুলি রং ছাড়া নদীর কোন কোন স্থানে কালচে ও ধূসর রং ও চোখে পড়ে ।এর কারণ মূলত নদীর পাদদেশে থাকা প্রাচীন পাথরগুলি ।কয়েক মিলিয়ন বছর পুরনো এই পাথরগুলি ক্রমশ কোন কোন জায়গা ধূসর ও কোন কোন জায়গায় কালচে রং ধারণ করেছে যার ফলে স্বচ্ছ জলের উপর থেকে ওই পাথরগুলো দেখে জলের রং কালচে ধূসর বলে ভ্রম হয় ।

তবে এখানেই কিন্তু শেষ নয় প্রতি ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে এই নদীকে সেজে   উঠতে দেখা যায় বিভিন্ন রং এ।শুধু যে নদীর রঙে এই জায়গাকে সুন্দর করে তুলেছে তাই নয় ,এর আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য ঝর্ণা বিশাল জলাশয় ও আন্ডারওয়াটার গুহ ।তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় কি জানেন ?এই নদীতে নেই কোন প্রকার জলজ প্রাণী এমনকি মাছ ও ।হলে পর্যটকরা নিশ্চিন্তে সাঁতার কাটতে পারেন এই নদীতে ।

খুবই দুর্গম স্থানে অবস্থিত হবার ফলে আগে এই নদীতে পৌঁছানো খুবই ঝামেলার ব্যাপার ছিল তবে বর্তমানে খুব সহজেই এই জায়গায় ভ্রমণ করতে যাওয়া যায় ।তবে আর চিন্তা কি ?প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে। চোখ বন্ধ করে চলে যাওয়া যেতে পারে এখানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *