রানী ক্লিওপেট্রার মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল? মিশরীয় গোখরার ছোবলেই কি মৃত্যু

নিউজ ডেস্ক – ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণ অক্ষরেখা খোদিত রয়েছে বিখ্যাত রানী সপ্তম ক্লিওপেট্রা ফিলোপেটর ছিলেন মিশরের টলেমাইক সাম্রাজের শেষ সক্রিয় শাসক। তিনি তার ঘটনাবহুল জীবনের জন্য ইতিহাসে কুখ্যাতি পেয়েছেন। তবে তার ৩৯ বছরের জীবন যতটা নাটকীয় ছিল তার থেকে বেশি আলোচনা জন্ম দিয়েছে তার মৃত্যু রহস্যকে ঘিরে। আর এই রহস্যময় ঘটনার সূচনা তার প্রেমিক রোমান জেনারেল মার্ক অ্যান্টনির কারণে। ক্লিওপেট্রার সঙ্গে প্রেমের কারণে অ্যান্টনিওর দ্বন্দ্ব শুরু হয় রোমান সাম্রাজ্যে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অক্টাভিয়ানের সঙ্গে। এই যুদ্ধে অক্টাভিয়ানকে পূর্ণ সমর্থন জানায় রোমান সাম্রাজ্যের জনসাধারণ।

অতঃপর খ্রিস্টপূর্ব ৩১ সালে ঐ যুদ্ধে কৌশলগত কারণে ব্যর্থ হয় অ্যান্টনি এবং ক্লিওপেট্রার সমন্বিত বাহিনী। ইতিহাসে এই যুদ্ধ ব্যাটল অব অক্টিয়াম নামে বিখ্যাত। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দুজনে পালিয়ে আলেকজান্দ্রিয়ায় ফেরেন। সেখানেই পরাজিত অ্যান্টনিও আত্মহত্যা করেন। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ৩০শে  মৃত্যুবরণ করেন রানী ক্লিওপেট্রা। তার মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় সেই সময়ের নথিপত্রে।

পৌরাণিক মতে জানা গিয়েছে, রানী ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর কারণ হিসেবে আত্মহত্যাকে উল্লেখ করা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে এমনটা প্রচলিত রয়েছে। অনেক ইতিহাসবিদের মতে, ছোটখাট ভাইপার কিংবা মিশরীয় গোখরার ছোবলে তার মৃত্যু হয়েছিল। আর এর সপক্ষে যুক্তি হচ্ছে, ভাইপারগুলো মিশরে রাজকীয়তার ধারক হিসেবে বিবেচিত হত। ফলে প্রাসাদে এগুলো সংরক্ষণের সম্ভাবনা ছিল প্রবল। অন্যদিকে, ক্লিওপেট্রা যে দেবীর (আইসিস) পূজা করতেন, মিশরীয় গোখরো ছিল তার প্রিয় সাপ। কিন্তু এই মতবাদের বিপক্ষেও কথা বলছেন আধুনিক মিশরীয় গবেষকরা। তাদের মতে, সাপের কামড়ে রানীর মৃত্যু হয়েছে এটি সহজেই প্রমাণ করার মতো নয়। গোখরা সাপ কমপক্ষে ৫ ফুট লম্বা হয় এবং বড়সড় আকৃতির হলে ৮ ফুটের কম কখনোই হয় না। যারা সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে মত দিয়েছেন তারা আরও বলেছেন সাপটি রানীর কক্ষে একটি খাবারের ঝুঁড়িতে লুকিয়ে ছিল। আবার এটাও উল্লেখ করা হয়েছিল যে খাবারের ঝুঁড়িতে ফলমূল সংরক্ষণ করা হতো। কারো কারো মতে ঝুঁড়িতে শূকরের মাংস ছিল। আর এই বাক্সটি একটি গোখরা সাপ লুকিয়ে থাকার জন্য কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। এছাড়াও ছোট আকৃতির গোখরা সাপের কামড়ে সরাসরি মৃত্যু হয় না। বরঞ্চ এর মাঝে চিকিৎসকদের ডাকার সময়-সুযোগও পাওয়া যায়।

মিশরের ইতিহাসবিদরা মনে করেন, এটি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয় যে, একটি সাপ একসঙ্গে ক্লিওপেট্রা এবং তার দুই দাসীকে হত্যা করেছে। তবে ক্লিওপেট্রার মৃত্যু রহস্যের ঘটনার সত্যতা আজও অজানাই রয়ে গেছে। কারণ নিজের চোখে ক্লিওপেট্রার মৃত্যু দেখেছেন এমন কারো বিবৃতি আজ অবধি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.