কেন মালদহের রসকদম্বের পেছনে রয়েছে শ্রী চৈতন্য দেব?
নিউজ ডেস্ক – বাঙালির ঐতিহ্য শুরু হয় মিষ্টি থেকে। একাধিক জিনিসের কারণে বিদেশে বাংলার নাম ছড়ানোর পাশাপাশি এবার মিষ্টির জন্য বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেছে বাংলা। কারণ বাংলায় যেমন মিষ্টি ছাড়া কোন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় না এবার বাঙ্গালীদের মিষ্টির দিকেই ঝোঁক দেখা যাচ্ছেন বিদেশিদেরও। কার্যত সেই কারণেই বিদেশের মাঠিতে বাংলার জনপ্রিয় কতগুলি মিষ্টির উল্লেখ করা হয়েছে।
১) কৃষ্ণনগরে সরভাজা বা সরপুরিয়া :- কথিত রয়েছে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য নাকি এই মিষ্টি খেতে খুব ভালোবাসতেন। অর্থাৎ এই মেয়েটির বয়স প্রায় ৫০০ বছরেরও পুরনো। তবে সরপুরিয়া কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত হলেও পুরী ধামেও এটি বেশ জনপ্রিয়। সেখানে এই সরভাজার নাম ছানাপোড়া। কার্যত শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আমল থেকেই চলে আসছে সরভাজা মিষ্টির প্রচলন।
২) মিষ্টি দই :- বাঙ্গালীদের মিষ্টির তালিকায় প্রথমে রসগোল্লা থাকলেও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এই দই। পশ্চিমবঙ্গ , ওড়িশা বাংলাদেশে বহুল জনপ্রিয়তা রয়েছে দইয়ের। এটি তৈরি করার পদ্ধতিও খুব সোজা। দুধ ফুটানোর পর যখন যদিও ঘন হয়ে যায় তার মধ্যে চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয় মিষ্টি দই। তবে সারারাত এটি মাটির ভাঁড় রেখে দিতে হয় যাতে সেটি গেঁজিয়ে দিয়ে উঠতে পারে। তবে এবার প্রশ্ন হচ্ছে কোন প্লাস্টিকের কন্টেইনার ব্যবহার না করে মাটির ভাঁড় কেন ব্যবহার করা হয়! খুবই সহজ উত্তর। মাটির ভাঁড়ে দই রাখলে ভাঁড়ের গাত্রে থাকা ছোট ছিদ্র থেকে জলীয়বাষ্প বেরিয়ে যেতে পারে এবং যে টেম্পারেচারে দই তৈরি হবে সেই টেম্পারেচার দিতে সক্ষম হয় মাটির পাত্র। তবে অনেকে আবার দইয়ের সঙ্গে এক চিমটি এলাচ ও রেখে দেয় যাতে গন্ধ ভালো আসে। আগে মিষ্টি দই টক এবং টক দইয়ের প্রচলন ছিল। তবে বর্তমানে সেগুলির সাথে সাথে ক্রুট দই পাওয়া যায়। সেটি তৈরি করতে অসাধারণ বইয়ের সঙ্গে কনডেন্স মিল্ক দিয়ে একটু মাইক্রোওভেনে ঘন করলেই তৈরি হয়ে যাবে হোমমেড দই।
৩) মালদহের রসকদম্ব :- কদম ফুলের আকৃতি পাওয়া যায় এই রসকদম্ব। পুরান মতে কথিত রয়েছে একবার মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেব মালদহে সকলকে দীক্ষা দিচ্ছিলেন কদম গাছের তলে বসে। এরপর থেকেই মহাপ্রভুর অস্তিত্ব মনে রাখতে ও বিষয়টি প্রচার করতে তৈরি হয় রসকদম্ব। পূর্বে তৈরি করা এই মিষ্টির এখনো রমরমা বাজার চলে মালদহে।
৪) সিউড়ির মোরব্বা :- এই মিষ্টির নাম শুনে প্রথমে মনে পড়ে বীরভূমের কথা। কারণ বীরভূমে বহুল পরিচিত হচ্ছে মোরব্বা। এটি তৈরি করা হয় রাজনগরে। তবে এর পিছনে কিছু ইতিহাস রয়েছে। লেখক অবিনাশ চন্দ্র ঘোষ নিজের লেখনীর মাধ্যমে জানিয়েছেন, মোরব্বা মূলত পর্তুগিজদের খাবার। তাদের কাছ থেকেই এই রান্নার কলাকৌশল শিখেছে বাঙালিরা। অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিভিন্ন ফল ও সবজি দিয়ে মরন বান তৈরিতে হাতে খড়ি দিয়েছিলেন হরিপ্রসাদ দে। তখন থেকেই এটি মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
৫) মেচা সন্দেশ :- মোল্লারাজার আমল থেকে চলে আসছে মেচা সন্দেশের প্রচলন। এই সন্দেশ তৈরি করা খুবই সোজা। বেসন দিয়ে তৈরি করা হয় এই সন্দেশ। অম্বেষণ মাখার পর তার পাতলা আস্তরণের উপর টিসো এলাচ দিয়ে ভেজে নিয়ে তারপরে রসে ছেড়ে দিলে তৈরি হয়ে যায় মেচা সন্দেশ।
৬) বাবুরসা সন্দেশ :- মেদিনীপুরে বিখ্যাত মিষ্টি। ইতিহাসে কথিত রয়েছে বাবু এডওয়ার্ড নামে এক ইউরোপিয়ান মগদের হাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করার জন্য তার নাম এই মিষ্টি উৎসর্গ করা হয়। এটি বানানোর পদ্ধতিও খুব সোজা। প্রথমে এটিকে করা করে ভেজে তারপরে মিষ্টির রস ভেজালেই তৈরি হয়ে যায় বাবুরসা সন্দেশ।